প্রবেশগম্য যানবাহন বিষয়ক আন্তবিশ্ববিদ্যালয় নকশা প্রতিযোগিতা
ন্যাশনাল একাডেমী ফর এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট (নায়েম) মিলনায়তনে ১০ মে ২০১৩ বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্যা চেঞ্জ এন্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) এবং ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (এসাব) এর যৌথ উদ্যোগে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ডিজাইন কন্টেস্ট এর সেমি ফাইনাল, গ্র্যান্ড ফিনালে ও পুরুস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের সহজ চলাচল উপযোগী সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থার স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ‘ইউনিভার্সাল এক্সেসিবিলিটি ইন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট’ বিষয়ের এ প্রতিযোগিতায় হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীগন যাতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বিশেষ করে পাবলিক বাসে সহজে চলাফেরা করতে পারেন সে বিষয়ে বাস্তবধর্মী প্রয়োগযোগ্য সমাধান বের করার চেষ্টা করতে দেশের ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে প্রকৌশল বিভাগের প্রায় ৩০০জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগীগণ অংশগ্রহন করেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআরটিসির চেয়ারম্যান, জনাব জসিম উদ্দিন আহমেদ আশা প্রকাশ করেন অচিরেই দেশীয় প্রেক্ষাপটে চলাচল উপযোগী র্যা¤পযুক্ত বাস এদেশের রাস্তাতেও চলাচল করবে। হুইলচেয়ার কখনো প্রতিবন্ধকতার প্রতীক হতে পারে না, বরং একে বাধামুক্ত চলাচলের ব্যবস্থা করা সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের অবশ্য কর্তব্য। শুধুমাত্র কিছু প্রতিবন্ধকতার কারনে একজন ব্যক্তির মেধা ও মনন অর্জন ও বিকশিত হওয়ার পথ বাধাগ্রস্ত করবে এটা মানা যায় না। তিনি ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে সমাজের এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহবান জানান। এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বি-স্ক্যান ও এসাবকে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য জনসচেতনতামূলক এই উদ্যোগের এবং অংশগ্রহনকারী তরুণ প্রকৌশলীদের উদ্ভাবনী কর্মকান্ডের ব্যাপক প্রসংশা করে তার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ এম কায়কোবাদ বলেন, উন্নত বিশ্বে একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তি শিক্ষালাভ ও কর্মসংস্থানের পুর্ণ সুযোগ পায়। ফুটপাথে চলার জন্য আমাদেরকেও উন্নত দেশের মডেল অনুসরণ করা উচিত। সরকারী বেসরকারী কর্তৃপক্ষ সচেতনভাবে এগিয়ে আসলে যাতায়াতের ব্যবস্থার এই প্রতিবন্ধকতা থাকবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বারডেম ল্যাবরেটরি সার্ভিসের পরিচালক ও বি-স্ক্যানের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী সমাপনী আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন। তিনি তার বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেন সরকার খুব শিগ্যিরই র্যা¤পযুক্ত প্রবেশগম্য বাসের উদ্যোগ নেবেন। চারদেয়ালের মাঝে বন্দী হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিরাও তাদের সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা পেয়ে সমাজে স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করতে পারবে। তবে শুধু সরকার নয় সর্বস্তরের জনগণকেই যার যার ক্ষেত্র থেকে সকলেই সমাজে এভাবে সবাই একে ওপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে কারো স্বপ্নপূরণই অসম্ভব নয়।
বি-স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব, আয়োজিত এ ডিজাইন প্রতিযোগিতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে সকলকেই ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন এদেশের রাস্তায় র্যা¤পযুক্ত প্রবেশগম্য যানবাহন বি-স্ক্যান এর অনেক দিনের স্বপ্ন। এদেশের রাস্তা উপযোগী প্রবেশগম্য যানবাহনের জন্যে দেড় বছর ধরেই বি-স্ক্যান কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই ডিজাইন কন্টেস্ট।
এছাড়া এসাব এর সাধারণ সম্পাদক আরিফ রায়হান মাহি প্রতিযোগিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রকৌশলের মেধাবী এই তরুণেরা এটিকে শুধু একটি ডিজাইন কন্টেস্ট হিসেবেই নেন নি। তারা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের স্বপ্নটি হৃদয়ে ধারণ করেছেন দেখে আমাদের ভালো লাগছে। এখানেই শেষ নয় বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন এখান থেকে বাছাইকৃত ডিজাইন নিয়েই প্রবেশগম্য একটি যানবাহন পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত বিচারকেরাও বক্তব্য রাখেন। সেমি ফাইনালিস্ট সকলকে সনদপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অতঃপর সেমি ফাইনাল রাউন্ড শেষে বিচারকমন্ডলি ৬টি টিমকে ফিনালেতে চূড়ান্ত করেন। বিচারকদের রায়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েটে) ‘আলোক যাত্রী’ ১ম এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড ট্যাকনোলজি ( এমআইএসটি) এর দল ‘বিজয়’ ২য় স্থান অধিকার করে। নির্বাচিত ১ম ও ২য় বিজয়ী দলকে যথাক্রমে ৪০০০০ ও ৩০০০০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর ‘চুয়েটো’ কে ১০ হাজার টাকার ইনোভেটিভ প্রাইজ প্রদান করা হয় ।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ ২০১৩ বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এই অভিনব প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে গ্রুপ স্টেজ রাউন্ড, ফিল্ড ট্রিপ ও গ্রুমিং সেশন রাউন্ড সফলতার সাথে শেষ হয়। স্বেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ের জনসচেতনতামূলক এই আয়োজনটি স্পন্সর করছেন উর্মি গ্র“প ও শানিন গ্র“প। সহযোগি স্পন্সর প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিলেন সম্প্রীতি ফোরাম ও ওয়াটারএইড।
Related Portfolio
একীভূত সমাজ গড়ার অঙ্গীকারে ওপেন কনসার্ট
প্রতিবন্ধী মানুষের কন্ঠস্বর হিসেবে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে বি-স্ক্যান কর্তৃক প্রকাশিত হচ্ছে ত্রৈমাসিক পত্রিকা অপরাজেয়। প্রতিবন্ধী মানুষের সমন্বয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত এই পত্রিকাটির ২য় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ‘চলুন, একীভূত সমাজ গড়ি’ এই
প্রবেশগম্যতা নিরীক্ষা ফলাফল বিষয়ক সাংবাদিক সম্মেলন
চট্টগ্রাম এবং ঢাকার সরকারি গুরুত্বপূর্ণ গণস্থাপনাগুলোতে যথাক্রমে ১৬, ১৮ ও ১৯ জুন’১৪ চট্টগ্রামে এবং ২৩ – ২৫ জুন’১৪ প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে প্রবেশগম্যতা সম্পর্কিত বিষয়ক অভিজ্ঞ ব্যক্তি, বুয়েট ও চুয়েটের প্রকৌশলী, ইশারা ভাষার দোভাষী ও স্বেচ্ছাসেবীদের একটি দল
অপরাজেয় ত্রৈমাসিক পত্রিকার ১ম বর্ষপূর্তি উদযাপন
চট্টগ্রাম সমিতি – ঢাকা মিলনায়তনে ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, শুক্রবার বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্যা চেঞ্জ এন্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ের একমাত্র মুখপত্র হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে এই পত্রিকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ঘরে