আমাদের পরিচিতি

আমরা কারা?

কিছু মানুষ,যারা নিজেরাই প্রতিবন্ধিতার সম্মুখিন কিংবা যারা খুব কাছে থেকে এমন মানুষদের কষ্টগুলো অনুভব করেছেন তাঁদের নিয়েই বি-স্ক্যান। বাংলাদেশের আর দশজন সাধারণ মানুষের যা নাগরিক অধিকার অথচ এই দেশেরই নাগরিক প্রতিবন্ধী মানুষেরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর তাই বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্যা চেঞ্জ এন্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) নামের স্বেচ্ছাশ্রমধর্মী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের  হয়ে প্রতিবন্ধী মানুষের  শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সর্বক্ষেত্রে প্রবেশের সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে নেমেছি আমরা ।

আমরা কি করতে চাই?

২০০৯ সালের ১৭ জুলাই সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুক থেকে বি-স্ক্যান এর কার্যক্রম শুরু হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের ঘুমন্ত মানুষগুলোকে জাগিয়ে তোলা তাঁদের দেশে তাঁদের আশে পাশেই অনাদরে অবহেলায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের কথা সবাইকে জানানো । প্রতিবন্ধী মানুষ সম্পর্কে এই দেশের মানুষের দৃষ্টিভংগী পাল্টাতে তাঁদের সচেতন করে তোলা। এছাড়াও প্রতিবন্ধী মানুষকে মর্যাদাবান মানুষ হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে তাঁদের মাঝে আত্নবিশ্বাস গড়ে তোলার একটি সূচনা পর্ব তৈরীতে সংগঠনটি কাজ করে চলেছে। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে সমমনারা সহজেই একত্রিত হতে পারেন, সংগঠনের নানা প্রায়গিক কর্মসূচিতেও যোগ দিতে পারেন।

কেন করতে চাই?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ( World Health Organization – WHO) ও বিশ্বব্যাংক (World Bank) এর সাম্প্রতিক এক জরীপ মতে বিশ্বে মোট প্রতিবন্ধী জনগণ আছে ১০০ কোটি, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৫ ভাগ। সেই হিসেবে প্রতিটি দেশে তার জনগোষ্ঠীর ১৫ ভাগ ধরে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লক্ষ। বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সমাজব্যবস্থা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসবাস করছে তারা। কেউ তেমন করে ভাবে না এই মানুষগুলো ঘরের কোনে একাকী নিভৃতে সামাজিক মেলামেশা, শিক্ষা, বিনোদন ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তাদের নাগরিক অধিকার শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সর্বক্ষেত্রে প্রবেশের সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী অপ্রতিবন্ধি নির্বিশেষে  ‘সবার জন্যে শিক্ষা’ এ শ্লোগান সর্বত্র। অথচ খুবই কম সংখ্যক প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনার সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কথা বলা হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নেই তেমন কোন তথ্য বা সচেতনতা। নেই শিক্ষার্থীদের জন্যে প্রয়োজনীয় মুক্ত চলাচল ব্যবস্থা। এখানে উল্লেখ্য যে দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাক এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্প সংখ্যক কিছু বিশেষ স্কুল থাকলেও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা না পারে বিশেষ স্কুলে যেতে না পায় সাধারণ স্কুলে যাওয়ার যথাযথ পরিবেশ। কারণ সাধারণ স্কুলে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্যে যে ঢালু পথ বা র‍্যাম্প এর ব্যবস্থা থাকার কথা তা কিছু সংখ্যক সরকারি স্কুল এবং ঢাকায়  দুই/একটি বেসরকারি স্কুলে ছাড়া কোথাও নেই। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষই জানেন না র‍্যাম্প কি! নেই তাদের জন্য বিশেষ টয়লেট ব্যবস্থা। আমাদের দেশের মানুষের মাঝে একটি ধারনা বদ্ধমূল প্রতিবন্ধী শিশুরা বিশেষ স্কুল ছাড়া সাধারণ স্কুলে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে পড়তে পারবে না। প্রতিবন্ধী মানুষেরাও যে শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে প্রমাণ করতে কিংবা আমাদের সমাজকে কিছু দিতে পারে এ কথা অধিকাংশ পরিবার এবং আমাদের ভদ্রসমাজ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বেশীরভাগই বিশ্বাস করতে চান না। এমনিভাবে বিভিন্ন দিক থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অভিভাবকগণ ভাবতে শুরু করেন প্রতিবন্ধী শিশুটিকে ঘরেই শিক্ষা দেই কিম্বা শিক্ষিত হয়ে সে করবেই বা কি! কে কি বলবে বা কে কি ভাববে এবং বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে অভিভাবকগণ প্রতিবন্ধী শিশু বা মানুষটিকে আবদ্ধ করে ফেলেন চারদেয়ালের ভেতর। তাদের সব কিছুতেই হয়ে যায় ‘না’।

# স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় – না।

# জন্মদিন বা বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান -না।

# বিয়ে বাড়ী – না।

# পাবলিক বাস বা ট্রেন – না।

# বিনোদন কেন্দ্র বা খেলার মাঠ তাতেও – না।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এই ‘না’ এর আবর্তে পরে হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী মানুষেরা। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে এই ‘না’ কে ‘হ্যাঁ’ তে রূপান্তরিত হতে দেখতে চাই। আমরা এমন একটি পূর্নাঙ্গ সমাজ ব্যবস্থা দেখতে চাই যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও বলবেন  হা আমাদেরও সুযোগ আছে জীবনকে সুন্দর করে সাজানোর ।