প্রবেশগম্যতা

অবশেষে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হলো জাতীয় জাদুঘরে

বি-স্ক্যান প্রতিবেদক

বি-স্ক্যান এর দীর্ঘ প্রচেষ্টার প্রায় আড়াই বছর পর নিশ্চিত হলো জাতীয় জাদুঘরে সর্বজনীন প্রবেশগম্যতা। গত অক্টোবর”১২ জাতীয় জাদুঘরে হুইলচেয়ার প্রবেশগম্য র‌্যাম্প ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা টয়লেট নির্মাণ কাজ শুরু হয় যা শেষ হয় জানুয়ারি’১৩ তারিখে। গত ১ মার্চ, ২০১৩ মাননীয় তথ্যমন্ত্রী জনাব আবুল কালাম আজাদ র‌্যা¤পটি উদ্বোধন করেন। এখন থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গ জাতীয় জাদুঘরে অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

শুরুটা হয়েছিল মার্চ’ ২০১০ সালে বি-স্ক্যান এর অন্যতম প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে প্রবেশগম্যতা প্রকল্পের আওতায়। সে সময় রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের সহযোগিতায় বি-স্ক্যান এই প্রকল্পটি হাতে নেয়। যার মাধ্যমে শারীরিক বা চলন প্রতিবন্ধী ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মুক্ত চলাচলের সুবিধার্থে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে একটি র‌্যাম্প ও একটি টয়লেট নিশ্চিত করাই ছিল মূল লক্ষ্য। প্রকল্পটির আওতায় প্রথম কাজ হিসেবে বি-স্ক্যান বেছে নেয় শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরকে। এমন একটি জায়গায় যদি প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা যায় (যা বিল্ডিং কোড ২০০৮ অনুযায়ী প্রতিটি সরকারি ভবনে এমনিতেই থাকা উচিত) তাহলে অন্যান্য অনেক বিল্ডিংয়ে এটি নিশ্চিত আরো সহজ হবে।

রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রাল এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং কিছু সদস্যকে সাথে নিয়ে বি-স্ক্যান গত ৬ জুলাই, ২০১০ জাতীয় জাদুঘরের মহা পরিচালক জনাব প্রকাশ চন্দ্র দাসের সাথে প্রবেশগম্যতার অনুমতি ও কাজের তত্বাবধায়ন সম্পর্কিত একটি চিঠি নিয়ে দেখা করলে তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি গ্রহণ করেন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য র‌্যাম্প ও টয়লেটের ডিজাইন তৈরীতে বি-স্ক্যান এর নিকট সহায়তা কামনা করেন। এক্ষেত্রে রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জনাব আবরার হোসেন ক্লাবের পক্ষ থেকে বি-স্ক্যান কে সর্বাতœক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এরপর রোটারি ক্লাবের সাহায্য বি-স্ক্যান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগীয় প্রধান ড. জেবুন নাসরিনের সহায়তা চাইলে তিনি স্বতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসনে। বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল ইমামসহ আরো দুজন সহযোগী অধ্যাপক, রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রাল এবং বি-স্ক্যান জাদুঘরের মহা পরিচালকের সাথে ২ আগস্ট ২০১০ দ্বিতীয়বারের মতন বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ জাদুঘরের জন্য এই ডিজাইনটি তৈরী করে দেবেন এবং জাদুঘরের প্রকৌশলীরা তাদের সহযোগিতা করবেন। এবং বৈঠক জনাব প্রকাশ আরো বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য সর্বজনীন প্রবেশগম্যতার বিষয়টি কার্যকর হোক সেটা তিনিও চান কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণলয়ের অনুমতি ছাড়া যেহেতু সম্ভব নয়, তাই তথ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে যদি অনুমতি এনে দেয়া যায় তাহলে এ কাজে কোন বাধা থাকবে না। সে লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ৭ আগস্ট ২০১০ জাদুঘরের ৯৭তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী জনাব আবুল কালাম আজাদ যখন আসবেন তাৎক্ষনিক তার সাথে ছোট্ট একটি বৈঠকের আয়োজন করা হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সেবারই প্রথম জাদুঘর কর্তৃপক্ষ প্রতিবন্ধী শিশু কিশোরদের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেখানে বি-স্ক্যানও অংশ নেয়। অনুষ্ঠানের আগে এক সংক্ষিপ্ত বৈঠকে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী তাৎক্ষনিক মৌখিক অনুমতি দেন এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মহাপরিচালককে অনুরোধ করেন। জাদুঘরের অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বি-
স্ক্যান এর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী, জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি জনাব এম আজিজুর রহমান, রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের প্রাক্ততœ সভাপতি জনাব লেঃ জেনারেল হারূন অর রশিদসহ ক্লাবের সদস্যবৃন্দ, বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ড. জেবুন নাসরিন এবং সহযোগী অধ্যাপক জনাব নাজমুল ইমাম ও বি-স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব ও বি-স্ক্যান সদস্যবৃন্দ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুয়েটের শিক্ষকবৃন্দ মাত্র এক সপ্তাহের মাঝে অক্লান্ত পরিশ্রম করে শুধুমাত্র হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী নয় সব ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য আন্তর্জাতিকমানের একটি পূর্নাঙ্গ ডিজাইন তৈরী করে দেন যা পর্যায়ক্রমে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবেন বলে আশা করা হয়। নানাবিধ কারণে বুয়েটের সহযোগিতা শেষ পর্যন্ত জাদুঘর কর্তৃপক্ষ নিতে পারেন নি। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিওলজি বিভাগকে দিয়ে নতুন ডিজাইন তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু হয় যা ২০১১ তে অনুমোদন পায়। কিন্তু প্রতি বছরই অর্থ সংকুলান এবং সরকারের বিভিন্ন মহলের দীর্ঘসুত্রিতার কারণে বাস্তবায়ন পিছাতে থাকে। বি-স্ক্যান থেকে যখনই এই কাজের আপডেট জানতে ফোন করা হত, বলা হত কাজ এগুচ্ছে। কিন্তু এগুনোতো দূরে থাক শুরুর কোন নজির তখনো আমাদের চোখে পরে নি।

এমতাবস্থা বি-স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক অনেকটা হতাশাবশত ৩১ জানুয়ারি, ২০১২ কালের কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি ছাপা লিখেন। ১৭ এপ্রিল, ২০১২ কালের কন্ঠের চিঠিটির কপি ও সংস্কৃতি মন্ত্রাণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব বরাবর সেই চিঠির অনুলিপিসহ এই প্রজেক্টের বর্তমান পরিস্থিতি ও অগ্রগতি সম্পর্কে আবারও জাদুঘরের মহাপরিচালক কাছে জানতে চায় বি-স্ক্যান। অবশেষে ২০১১ তে ট্রাস্টি বোর্ডের ১২৫তম সভায় নকশা অনুমোদন করা হয়। এরপর আগস্ট’ ২০১২ প্রবেশগম্য টয়লেটের কাজ শুরু হয় এবং পরবর্তীতে র‌্যা¤েপর। এর মাঝে বহুবার পরামর্শের জন্য জাদুঘর থেকে বি-স্ক্যান এর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। নানা সময়ে বি-স্ক্যান সদস্যগণ সাধ্যমত সহযোগীতার চেষ্টা করেছে।

এই বিষয়ে যাদের যারা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন জাদুঘরের পক্ষ থেকে সর্বোপরি জাদুঘরের মহাপরিচালক প্রকাশ চন্দ্র দাস, ডেপুটি কিপার

ড. নীরু শামসুন্নাহার, সহকারী প্রকৌশলী জনাব মোঃ মনিরুল ইসলাম, উপ সহকারী প্রকৌশলী জনাব নাজির হোসেন, নকশাবিদ জনাব আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ। সবশেষে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

স্থাপত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বসা হয় – ৮/৯/২০১০

১১৮ তম সভায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাথে সভায় বসা হয়

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে নকশার দায়িত্ব দেয়া হয় ১৫/২/২০১১

অর্থায়নের বয়ান চাওয়া হয় ২৯/৩/২০১১

নকশা মতামত চেয়ে স্থাপত্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয় ১৯/৯/২০১১

স্থাপত্য অধিদপ্তরের মতামত প্রদান ২৭/১২/২০১১

ট্রাস্টি বোর্ডের ১২৫তম সভায় নকশা অনুমোদন করা হয়।

টেন্ডার প্রদানের শেষ সময় হিসেবে ৫/৯/২০১১